মেঘনা–গোমতী, শাহ আমানতসহ সওজের ২৬ সেতুতে ব্যয়ের বহুগুণ আয়, তবু টোল

 


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। তিন দশক আগে চালু হওয়া এই সেতু দুটি থেকে সরকার গত আগস্ট পর্যন্ত টোল বাবদ আয় করেছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এত আয়ের পরও টোল থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের গত আগস্ট পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, মেঘনা ও মেঘনা-গোমতীর মতো দেশের ২৬টি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের বহুগুণ উঠে গেলেও সেগুলোর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর টোল আদায় চলছেই। দু–একটি সেতু বড়, বেশির ভাগই মাঝারি।


"টোলের ক্ষেত্রে আরেকটি দিক হলো, সেতুর ইজারা পান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, টোল আদায় করে ঠিকাদারেরা নিজেরা বেশি লাভবান হয়েছেন। এ কারণে বহু বছর আগে নির্মিত ও তুলনামূলক ছোট সেতু থেকেও টোল আদায় চলছে।"


কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেতু ব্যবহারকারীরা টোল আদায় বন্ধের জন্য বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার টোল আদায়ে কোনো ছাড় দেয়নি; বরং এর আগে ২০১৪ সালে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সব সেতুতে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়।


টোলের কারণে যানবাহনের ভাড়া বেশি পড়ে এবং পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। টোল অনেকটা পরোক্ষ করের মতো, যা গরিবের কাছ থেকে ধনীদের সমান হারে আদায় করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ধনী ও সচ্ছলদের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে পারেনি। অন্যদিকে বিপুল ব্যয় ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ নানা প্রকল্প নিয়ে সরকারের খরচ অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যয় মেটাতে চাপ তৈরি করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, জ্বালানি ও সারের দাম এবং সেতুর টোল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে সম্ভাব্য সব সড়ক থেকে টোল আদায়ের জন্যও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।


টোলের ক্ষেত্রে আরেকটি দিক হলো, সেতুর ইজারা পান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, টোল আদায় করে ঠিকাদারেরা নিজেরা বেশি লাভবান হয়েছেন। এ কারণে বহু বছর আগে নির্মিত ও তুলনামূলক ছোট সেতু থেকেও টোল আদায় চলছে।


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এ জন্য সেসব অবকাঠামোর টোল ধরা হয় উচ্চ হারে, যা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে আর্থসামাজিক সুফল বিবেচনায় অবকাঠামো থেকে টোল নেওয়া হয় না। কারণ, টোল একধরনের পরোক্ষ কর। দেশে পুরোনো সেতুগুলো থেকে টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া উচিত।


সারা দেশে সওজের অধীনে থাকা ৬৭টি মাঝারি ও বড় সেতু থেকে টোল আদায় করা হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৬টি সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের বহুগুণ অর্থ টোল বাবদ আদায় করা হয়েছে। বর্তমানে টোল বাবদ সওজ আয় করে এক হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। ঠিকাদার বা ইজারাদারের পেছনে খরচ গড়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।


২০১৪ সালে সওজের অধীন সড়ক, সেতু, পাতালপথ (টানেল), উড়ালসড়ক ও ফেরি থেকে টোল আদায়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় ২০০ মিটারের দীর্ঘ সব সেতু টোলের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া যেসব জায়গায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, ২০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের হলেও সেগুলোতে কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে। নীতিমালায় বিভিন্ন শ্রেণির সড়কের ভিত্তি টোল ১০০ থেকে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যানবাহনের শ্রেণি এবং সেতুর দৈর্ঘ্যের ওপর তা বাড়ে-কমে। তবে একটি সেতু, সড়ক বা স্থাপনা থেকে কত দিন পর্যন্ত টোল তোলা হবে, নীতিমালায় তা উল্লেখ করা হয়নি।


সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণে যে খরচ হয়, তা মেটানোর জন্যই সরকার টোল আদায় করে থাকে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও আয়ের সামঞ্জস্য কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়।



সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সারা বিশ্বেই সড়ক বা সেতুতে টোল আদায় করা হয়। সরকার আয়করের বাইরে অন্যান্য আয় বাড়াতে চায়। এ জন্য সেতুর টোল আদায় করা হয়। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) টোল বাবদ তাদের দুই হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য দেওয়া আছে। ফলে টোলের আওতা বাড়ানো ছাড়া তাঁদের উপায় নেই। তবে সরকার যদি মনে করে কোনো সেতু বা সড়কে টোল বন্ধ করে দেওয়া উচিত, সেটা করতে পারে।


ব্যয় উঠে যাওয়ার পরও টোল


মেঘনা সেতু থেকে টোল আদায় শুরু হয় ১৯৯০ সালে। মেঘনা-গোমতী সেতুতে টোল বসে ১৯৯৪ সালে। এই দুই সেতু থেকে ব্যয়ের ১২৩ গুণ আয় করা হয়েছে (৩৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা)।

জাপানের অর্থায়নে মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। চালুর পর থেকে বিভিন্ন সময় সেতু দুটিতে টোলের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে এই দুটি সেতু থেকে দিনে গড়ে এক কোটি টাকার মতো আয় হয়। এর মধ্যে টোল আদায়কারীর পেছনে চলে যায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।


২০১৯ সালের মে মাসে পুরোনো দুটি সেতুর পাশে আরও দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে শুধু এই দুটি সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পেও অর্থায়ন করে জাপান। নতুন ও পুরোনো সেতু মিলিয়ে একসঙ্গে টোল আদায় করা হয়। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ও পুরোনো সেতু মিলে ব্যয় হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। সেটার চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়েছে।


মেঘনা ও গোমতী সেতুতে ট্রাকের টোল এখন ৪০০ টাকা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে তা ১৫০ টাকা। অটোরিকশার ২০ টাকা। সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে আয় যতই হোক, নতুন নির্মিত সেতুতে টোল আদায় করতে হবে। পুরোপুরি বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে টোলের হার কমিয়ে দিতে পারে এবং সেটা কার্যকর হতে পারে শুধু পণ্যবাহী যান ও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে, যা পণ্যের পরিবহন ব্যয় ও সাধারণ মানুষের খরচ কমাবে।


ঢাকার অদূরে সাভারের হেমায়েতপুর ও মানিকগঞ্জের মধ্যে সংযোগকারী ভাষাশহীদ রফিক সেতুতে (ধল্লা সেতুতে) ২০০০ সালে টোল আদায় শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে উদ্বোধন করা এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সেতুটি থেকে এখন পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে সাড়ে ৮৪ কোটি টাকা। কিছুদিন পরপরই এই সেতু থেকে টোল প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় লোকজন। এর মধ্যে সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুই ও তিন চাকার যান থেকে টোল না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।


সরকার পতনের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর সেতুটির টোল প্লাজা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে টোল আদায় বন্ধ আছে।


আত্রাই নদে ২০০ মিটারের কিছু বেশি দৈর্ঘ্যের দিনাজপুরের মোহনপুর সেতু থেকে নির্মাণ ব্যয়ের ২৬ গুণ টাকা উঠিয়ে নেওয়ার পরও থামছে না সওজ। এখনো যানবাহনভেদে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষেরা নানা সময় আন্দোলন, স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে টোল প্রত্যাহার হয়নি।


চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুতে (তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু) টোল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মিত হয়েছে কুয়েতের সহায়তায়। শুধু সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৮০ কোটি টাকা। গত আগস্ট পর্যন্ত এই সেতু থেকে টোল বাবদ আয় হয়েছে ৬৬৫ কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে শাহ আমানত সেতুতে বড় ট্রাকের টোল ৩০০ টাকা। বড় বাসের ক্ষেত্রে তা ১৫৫ টাকা।


কিছু কিছু মাঝারি সেতু বিদেশি অনুদানে নির্মিত হয়েছে। সেগুলোর নির্মাণ ব্যয় উঠে গেছে বহুগুণ। তারপরও টোল আদায় চলছে। যেমন ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে চীনের অনুদানে। সেতুটি চালু করা হয় ১৯৯২ সালে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪৩ কোটি টাকা। তবে গত আগস্ট পর্যন্ত সেতুটি থেকে সওজ আয় করেছে ১৬১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয়ের সাড়ে তিন গুণ আয় হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, শম্ভুগঞ্জ সেতুটি দিয়ে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও শেরপুর—এই চার জেলার মানুষের যাতায়াত। দিনে ৬ থেকে ৭ হাজার যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে বড় ট্রাকের টোল ১৩৫ টাকা, বড় বাসের ৬৫ টাকা। অটোরিকশা থেকে ১৫ এবং যন্ত্রচালিত লাঙল (পাওয়ার টিলার) থেকে ৬০ টাকা টোল নেওয়া হয়। অটোরিকশাচালকদের দাবি, একবার ১৫ টাকা টোল বেশি নয়। কিন্তু তাঁদের বারবার সেতুটি পাড়ি দিতে হয়। ফলে দিনের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় টোলের পেছনে।


ঠিকাদার কারা

সওজ সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদার ও ইজারাদারদের বড় অংশই দলটির স্থানীয় নেতা, নেতার পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়স্বজন। কিছু ক্ষেত্রে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্টরা টোল আদায়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক ইজারাদার পালিয়ে গেছেন। প্রভাবশালী ইজারাদার ও সওজের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টোল আত্মসাৎ, বেশি টোল আদায় করে কম দেখানোসহ নানা অনিয়মের তথ্য নানা সময় উঠে এসেছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, চারটি বড় সেতুর টোল আদায়ে যুক্ত শামীম এন্টারপ্রাইজ (এসইএল)। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক (শামীম)। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। তাঁর ছোট ভাই ইকরামুল হক (টিটু) আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের টানা দুবার মেয়র হয়েছিলেন। টোল আদায় ছাড়াও শামীম এন্টারপ্রাইজ সওজের সেতু ও সড়ক নির্মাণকাজ করে।


ইউডিসি কনস্ট্রাকশন তিনটি বড় সেতু এবং একটি সড়কে টোল আদায়ের দায়িত্ব পালন করছে। সওজ সূত্র জানায়, ইউডিসির উত্থান শামীম এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মগবাজার উড়ালসড়ক, ঢাকা বাইপাস সড়ক নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর টোল আদায়, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাসের বিশেষ লেন (বিআরটি) নির্মাণসহ অসংখ্য প্রকল্পে শামীম এন্টারপ্রাইজের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে ইউডিসি। একপর্যায়ে সাবেক সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনী এলাকার কিছু ব্যক্তি ইউডিসির গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তাঁদের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কালাম হোসেনের।


তিনটি বড় সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস)। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।


বরিশাল অঞ্চলের দুটি বড় সেতুর টোল আদায় করছে মাহফুজ খান লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তাঁর ছেলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।


একটি সেতুর টোল আদায় করছে এইচ এন ব্রিকস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লুৎফর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন তিনি।

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভান ইনফ্রা (প্রা.) লিমিটেড পাঁচটি সেতু ও একটি সড়কে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে টোল আদায়ের কাজ করছে।


নির্মাণ ব্যয় বেশি, টোল চড়া

পদ্মা সেতু নির্মাণে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। সেতুটি শেষ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় ৩১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ ব্যয় শুরুতে ধরা হয়েছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার কোটি টাকা।


সেতু ও সড়কে টোলের কারণে ব্যয় কতটা বাড়ে, তার একটি উদাহরণ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। একটি বাসকে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে শুরুতে টোল দিতে হয় রাজধানীর ভেতরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে, ২৬০ টাকা। এরপর এক্সপ্রেসওয়েতে টোল ৪৯৫ টাকা। পদ্মা সেতুতে টোল ২ হাজার টাকা। এরপর দোয়ারিকা-শিকারপুর সেতু দুটিতে টোল ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে যাত্রীপ্রতি ভাড়ার সঙ্গে ১০০ টাকার মতো যোগ হচ্ছে।


ঢাকা-বরিশাল রুটের নিয়মিত যাত্রী আলম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল পদ্মা সেতু চালু হলে নিয়মিত গ্রামের বাড়ি যাব। সেতু চালুর পর দেখি ভাড়া অনেক বেশি পড়ছে। এর ওপর ঢাকা থেকে বের হওয়া ও ঢোকার সময় যানজটে বসে থাকতে হয়।’

ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু দুটি চালু হয় ২০০৩ সালে। নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ টোল আদায় ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এখনো সেখানে টোল আদায় চলছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের বিষয় আছে, সেগুলোতে সীমিত হারে টোল রাখা যেতে পারে। তবে তা হতে হবে নির্মাণ ব্যয় ওঠানোর সময়ের তুলনায় কম। বাকি সেতুগুলোকে টোলমুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাজস্বের জন্য সম্পদশালীদের কাছ থেকে বাড়তি কর আদায় করা দরকার। করের বাইরে থাকা করযোগ্য মানুষকে করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।



No comments

Powered by Blogger.