৫ কোটি টাকার দরপত্রের ‘সব কাজ না পাওয়ায়’ যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে লাঞ্ছিত

 


পাঁচ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের ‘সব কাজ না পাওয়ায়’ যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর রশিদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যশোর জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলার নেতৃত্বে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এ কে শরফুদ্দৌলা (ছোটলু) প্রয়াত বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের শ্যালক। তিনি ‘এ কে শরফুদ্দৌলা’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) জন্য ছয়টি গ্রুপে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই দরপত্রে যশোরসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আজ ছয় গ্রুপের কাজের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলা বিএনপির সদস্য শরফুদ্দৌলার পছন্দের প্রতিষ্ঠান চারটি গ্রুপের কাজের জন্য নির্বাচিত হয়। অপর দুই গ্রুপের কাজও কেন ওই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে না—এ নিয়ে কৈফিয়ত চাইতে শরফুদ্দৌলা আজ হাসপাতালে যান। তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাজ না পাওয়ার কারণ জানতে চান।


হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও উপস্থিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলে তাঁর কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। এর পরপরই ওই কক্ষে প্রবেশ করেন বিএনপির কর্মী হাবিবুল্লাহ। তিনি প্রবেশ করেই তত্ত্বাবধায়ককে শাসাতে থাকেন। এর মধ্যেই শরফুদ্দৌলার নেতৃত্বে আরও দুজন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে শরফুদ্দৌলা ও হাবিবুল্লাহকে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে হাবিবুল্লাহকে তত্ত্বাবধায়কের চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন শরফুদ্দৌলা। নির্দেশমতো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে নামিয়ে আনতে গেলে তত্ত্বাবধায়কও হাবিবুল্লাহর জামার কলার ধরে আত্মরক্ষা করেন। এ সময় দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়। পরে হাসপাতালের অন্য কর্মীরা এগিয়ে গেলে বিএনপির নেতা–কর্মীরা চলে যান।


যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন–অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কাজের অনুমোদন দেওয়ার জন্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক শরফুদ্দৌলা লোকজন নিয়ে আমার অফিস কক্ষে এসে জানতে চান, তাঁর পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কেন ছয় গ্রুপের সব কাজ দেওয়া হলো না। আমি বলেছি, সর্বনিম্ন দরদাতাদের কাজ দেওয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এখন তো সবই অনলাইনে হয়। আমি ইচ্ছা করলেও সর্বনিম্ন দরদাতার বাইরে যেতে পারব না। এ সময় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। ক্ষমতাধর লোকজন তাঁরা। আমাদের কিছুই করার নেই। কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। তবে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’


তবে জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে; তবে হাসপাতালে কোনো টেন্ডার (দরপত্র) জমা দিইনি। তত্ত্বাবধায়কের কাছে আমার একটি কাজ ছিল, তাই গিয়েছিলাম। হাবিবুল্লাহর সঙ্গে তাঁর কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। তাই তাঁদের দুজনের ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি বিষয়টি ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।’


যশোর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার মাঝামাঝি সময়ে আমি তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে যাই। এ সময় বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা সাহেবের নির্দেশে হাবিবুল্লাহসহ দুজন তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে আনতে যান। পরে তত্ত্বাবধায়ক আত্মরক্ষার্থে একজনের কলার চেপে ধরেন। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে সবাই এগিয়ে গেলে তাঁরা কক্ষ ত্যাগ করে চলে যান। বিষয়টা আমাদের মর্মাহত করেছে।’

No comments

Powered by Blogger.